Correct Answer: Option C
ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte)-কে সমাজবিজ্ঞানের জনক বা প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এর পেছনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে, যা তাকে এই মর্যাদার অধিকারী করেছে।
মূল কারণসমূহ:
১. 'Sociology' শব্দের প্রবর্তক: অগাস্ট কোঁৎ সর্বপ্রথম 'Sociology' (সমাজবিজ্ঞান) শব্দটি ব্যবহার করেন। এর আগে তিনি সমাজ নিয়ে আলোচনার জন্য "Social Physics" (সামাজিক পদার্থবিদ্যা) শব্দটি ব্যবহার করতেন। কিন্তু পরে তিনি স্বতন্ত্র একটি শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১৮৩৯ সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ "Cours de Philosophie Positive"-এ 'Sociology' শব্দটি চয়ন করেন। এটি ল্যাটিন শব্দ 'Socius' (সমাজ) এবং গ্রিক শব্দ 'Logos' (বিজ্ঞান বা জ্ঞান) থেকে উদ্ভূত।
২. দৃষ্টিবাদ বা প্রত্যক্ষবাদের (Positivism) ধারণা: কোঁৎ-এর সবচেয়ে বড় অবদান হলো দৃষ্টিবাদ বা প্রত্যক্ষবাদ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান (যেমন: পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন) যেভাবে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ ও তুলনার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, ঠিক সেভাবেই সমাজব্যবস্থাকেও বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব। সমাজের ঘটনাগুলোকে কোনো কাল্পনিক বা ঐশ্বরিক ধারণা দিয়ে ব্যাখ্যা না করে, বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার এই ধারণাই সমাজবিজ্ঞানকে একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছে।
৩. ত্রস্তর সূত্র (The Law of Three Stages): অগাস্ট কোঁৎ মানব সমাজের জ্ঞান ও চিন্তার বিবর্তনের ধারাকে তিনটি স্তরের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন, যা "ত্রস্তর সূত্র" নামে পরিচিত। স্তরগুলো হলো: * ধর্মতাত্ত্বিক স্তর (Theological Stage): এই স্তরে মানুষ সব ঘটনাকে ঈশ্বর বা অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রভাব হিসেবে ব্যাখ্যা করত। * অধিবিদ্যক স্তর (Metaphysical Stage): এই স্তরে মানুষ বিভিন্ন ঘটনাকে বিমূর্ত কোনো শক্তি বা ধারণার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করত। * দৃষ্টিবাদী বা বৈজ্ঞানিক স্তর (Positive Stage): এটিই চূড়ান্ত স্তর, যেখানে মানুষ পর্যবেক্ষণ ও যুক্তির মাধ্যমে বৈজ্ঞানিকভাবে সবকিছুর কার্যকারণ সম্পর্ক অনুসন্ধান করে।
৪. সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু নির্ধারণ: কোঁৎ সমাজবিজ্ঞানকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন: * সামাজিক স্থিতিবিদ্যা (Social Statics): এটি সমাজের স্থিতিশীল দিক, অর্থাৎ সমাজের গঠন, কাঠামো এবং বিভিন্ন অংশের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। যেমন: পরিবার, রাষ্ট্র, ধর্ম ইত্যাদি কীভাবে সমাজকে স্থিতিশীল রাখে। * সামাজিক গতিবিদ্যা (Social Dynamics): এটি সমাজের গতিশীল দিক, অর্থাৎ সামাজিক পরিবর্তন, প্রগতি ও বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করে। ত্রস্তর সূত্রটি মূলত সামাজিক গতিবিদ্যারই অংশ।
এই যুগান্তকারী তাত্ত্বিক অবদানগুলোর মাধ্যমে অগাস্ট কোঁৎ-ই প্রথম সমাজকে অধ্যয়নের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক কাঠামো তৈরি করেন এবং একে একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্র হিসেবে পরিচিতি দান করেন। একারণেই তাকে সর্বসম্মতিক্রমে "সমাজবিজ্ঞানের জনক" বলা হয়।
Download our app for free and access thousands of MCQ questions with detailed solutions