ক্ষমতার ভারসাম্য তত্ত্ব বলতে কি বুঝি?
ক্ষমতার ভারসাম্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে বিবেচিত। ক্ষমতার ভারসাম্য বা Balance of Power হলো বিভিন্ন রাষ্ট্রের ক্ষমতার মধ্যে এমন একটি ভারসাম্য, যার ফলে কোনো একটি রাষ্ট্র অন্যান্য রাষ্ট্রের ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না। এই নীতি অনুযায়ী, এক বা একাধিক রাষ্ট্র অন্য এক বা একাধিক রাষ্ট্রের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে জোটবদ্ধ হয়। একটি রাষ্ট্র বা কয়েকটি বন্ধু রাষ্ট্র যদি একত্র হয়ে অন্যান্য রাষ্ট্রের তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তবে সেই রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রসমষ্টি অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তাই কোনো রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রজোটকে অন্যান্য রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রজোটের তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী হয়ে উঠতে দেওয়া উচিত নয়। একটি রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রজোট যদি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে, অন্য কোনো রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রজোট তার আক্রমণকে প্রতিহত করতে সক্ষম নয়, তখন তার মধ্যে আক্রমণাত্মক মনোভাব তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু পৃথিবীতে যদি কয়েকটি সমক্ষমতাসম্পন্ন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রজোট বর্তমান থাকে, তবে কোনো রাষ্ট্রই অন্য রাষ্ট্রকে আক্রমণ করতে সাহসী হয় না। এর ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাষ্ট্রসমূহের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অধিকতর নিরাপদ হয় এবং ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় থাকে। একটি রাষ্ট্র দুটি উপায়ে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। প্রথমত, প্রতিপক্ষের সামর্থ্যের বিপরীতে নিজের সামর্থ্য বৃদ্ধি করে এবং দ্বিতীয়ত, মিত্ররাষ্ট্রগুলোকে নিজের শক্তি দিয়ে সহায়তা করে। ক্ষমতার ভারসাম্য তত্ত্বটি প্রথম দিকে ইউরোপে জনপ্রিয়তা লাভ করে। নেপোলিয়নের পতনের পর থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য অর্জনের প্রবণতা লক্ষ করা যায়।