চর্যাপদের তথ্যের ভান্ডার

চর্যাপদ – বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন। বিসিএস সহ নানা পরীক্ষায় চর্যাপদ থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন আসেই। পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করতে আমরা এই পেজে চর্যাপদের নানা তথ্যকে তুলে ধরার প্রয়াস করেছি।

ক. চর্যাপদ – সাধারণ তথ্য

১. ‘চর্যা’ শব্দের অর্থ ‘আচরণীয়’।
২. বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হল চর্যাপদ।
৩. চর্যাপদের পুঁথি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় নেপাল রাজদরবার থেকে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কার করেন।
৪. পুঁথিটি আবিষ্কার করার আগে হরপ্রসাদ ১৮৯৭ ও ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে নেপালে যান।
৫. চর্যাগুলি তালপাতায় কুটিল লিপিতে লেখা।
৬. ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে চর্যার পুঁথিটি হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সম্পাদনায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা’ প্রকাশিত হয়।
৭. এই প্রকাশের সময় চর্যাপদ ছাড়া কৃষ্ণ পা’র দোহা, ডাকার্ণবও ছিল।
৮. চর্যার অর্থ জানা যায় মুনিদত্তের ‘নির্মল গিরাটীকা’ থেকে। এই টীকার তিব্বতি অনুবাদ করেন কীর্তিচন্দ্র বা চন্দ্রকীর্তি। টীকাটি আবিষ্কার করেন প্রবোধচন্দ্র বাগচী।
৯. চর্যাপদগুলি সাধারণত ১৬ মাত্রার পাদাকুলক ছন্দে লিখিত হয়েছে।
১০. চর্যায় ব্যবহৃত রাগ বা রাগিণীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পটমঞ্জরী, কামোদ, মল্লারী, মালসী ইত্যাদি।
১১. চর্যার কবি হিসেবে ২৪ জনের নাম বলা হলেও ২২ জন কবির নাম পাওয়া যায়। চর্যার প্রথম কবি লুই পা এবং শ্রেষ্ঠ কবি কাহ্ন পা। তাছাড়া কাহ্ন পা হলেন সর্বাধিক চর্যা রচয়িতা।
১২. চর্যার মোট পদের সংখ্যা ৫০টি। এর মধ্যে নষ্ট হয়ে যাওয়া পদের সংখ্যা সাড়ে তিনটি।
১৩. চর্যাপদকে হিন্দির সম্পদ বলে দাবী করেছেন রাহুল সাংকৃত্যায়ন।
১৪. চর্যার হিন্দি অনুবাদক রাহুল সাংকৃত্যায়ন। তিনি ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে এই অনুবাদ করেন। অনুবাদে চর্যাপদের নাম ছিল ‘দোহাকোষ’।
১৫. ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে নীলরতন সেন চর্যার ফটোকপি ছাপেন।
১৬. সরহ পা রচিত চর্যার ৩৯ সংখ্যক পদে ‘বঙ্গ’ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়।
১৭. ভুসুকু পা’র লেখা ৪৯ সংখ্যক চর্যায় ‘বঙ্গালি’ জাতির উল্লেখ আছে।
১৮. ডোম্বী পা’র লেখা ১৪ সংখ্যক পদে গঙ্গা ও যমুনা নদীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
১৯. কাহ্ন পা’র লেখা ১৮ সংখ্যক পদে কৌলিন্য প্রথার উল্লেখ আছে।
২০. চর্যার ১৪ সংখ্যক পদে পাটনী বৃত্তির উল্লেখ পাওয়া যায়।
২১. চর্যাপদের পদগুলো প্রাচীন কোন্ ছন্দে রচিত তা আবিষ্কার করা যায়নি। তবে আধুনিক ছন্দের পর্ব বিন্যাস বিবেচনায় মাত্রাবৃত্ত ছন্দে ফেলা যায়।
২২. ভুসুকুপা এবং শবরপা দুইজনই বাঙালি কবি ছিলেন। এর মধ্যে ভুসুকুপা নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দিতেন।
২৩. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে শবরপা বাঙ্গালি কবি ছিলেন ও তার জন্ম বাংলাদেশ অঞ্চলে হয়েছিলো।
২৪. চর্যাপদ বৌদ্ধ সহজিয়াদের সাধন সংগীত হলেও এখানে বর্ণিত চরিত্রগুলো অন্ত্যজ, ম্লেচ্ছ ও নিম্ববর্গের। যেমন মলেগ্রহী, কুড়ব, চন্ডাল, বরুড়, তক্ষণকার ইত্যাদি জাতের।
২৫. চর্যাপদের নারীরা খুবই স্বাধীনচেতা ছিল। তারা স্বেচ্ছায় পেশা ও সঙ্গী নির্বাচন করতে পারত।
২৬. জয়নন্দীপা ৪৬ নং পদটি রচনা করেছেন।

Latest News & Events