বর্তমান সময়ের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হলো সুনীল অর্থনীতি। সুনীল অর্থনীতি বা Blue Economy হচ্ছে। সমুদ্রের সম্পদনির্ভর অর্থনীতি। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ও এর তলদেশের বিভিন্ন প্রকার সম্পদকে কাজে লাগানোর অর্থনীতি। সমুদ্র থেকে আহরণকৃত যেকোনো সম্পদ সুনীল অর্থনীতির আওতাভুক্ত। বিশ্বব্যাংকের মতে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উন্নত জীবন ও কর্মসংস্থানের জন্য সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহার ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণই সুনীল অর্থনীতি। ১৯৯৪ সালে বেলজিয়ামের অধ্যাপক গুন্টার পাউলি ভবিষ্যৎ অর্থনীতির রূপরেখা প্রণয়নে একটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব মডেল হিসেবে সুনীল অর্থনীতির ধারণা প্রদান করেন। সমুদ্র পৃথিবীর অন্যতম মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। সমুদ্র মৎস্য এবং মৎস্য সম্পদের মাধ্যমে মানুষের খাবারের চাহিদা মেটায়, মানুষ এবং পণ্য পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পৃথিবীর সমস্ত মানুষের ১৫% প্রোটিনের যোগান আসে সমুদ্র থেকে। আন্তর্জাতিক আমদানি- রপ্তানির ৬০% এবং ৬-৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড হয় সমুদ্র পথে। বৈশ্বিক পর্যটন শিল্পের বিকাশে সামুদ্রিক ও উপকূলীয় পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে মোট হাইড্রোকার্বনের ৩২% সরবরাহ হয় সামুদ্রিক উৎস থেকে। এছাড়াও সমুদ্র নানা ধরনের প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ যেমন— বালি, লবণ, কোবাল্ট, গ্রাভেল, কপার ইত্যাদির আধার হিসেবে বিবেচিত এবং তেল ও গ্যাস আহরণ ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব উপাদানের সমষ্টিকেই বলা হয় সুনীল অর্থনীতি। সুনীল অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করা, দেশের সম্পদ বৃদ্ধি করা, সামাজিক পুঁজির সৃষ্টি করা, আয় বাড়ানো এবং সর্বোপরি পরিবেশে সঞ্চয়-বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করা।