রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন সাহিত্যকর্মে প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আছে?

A ‘মানসী’

B ‘যোগাযোগ’

C ‘ছিন্নপত্র’

D ‘কালান্তর’

Solution

Correct Answer: Option C

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্মে তৎকালীন পূর্ববঙ্গ—অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশ—প্রায়শই প্রকৃতি, গ্রামীণ জীবন এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট হিসেবে উঠে এসেছে। যদিও তিনি শান্তিনিকেতনে বসবাস করতেন, তবে পারিবারিক জমিদারি দেখভাল করতে নদীপথে তিনি পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়ান। সেই অভিজ্ঞতাগুলোরই সরাসরি প্রতিফলন দেখা যায় তাঁর পত্রসাহিত্য ছিন্নপত্র-এ।

ছিন্নপত্র (১৯১২) হল একটি চিঠির সংকলন, যা রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন পূর্ববঙ্গের শিলাইদহ, পতিসর ও কালিগ্রামে অবস্থানকালে। এই চিঠিগুলোর মধ্যে পূর্ববঙ্গের প্রকৃতি, নদী, কৃষিজীবন, এবং স্থানীয় মানুষের বাস্তব জীবনযাত্রা ও অনুভূতির এক অন্তরঙ্গ চিত্র ফুটে উঠেছে। শিলাইদহের পদ্মা নদী ও গ্রামীণ পরিবেশ কবিকে যেমন মুগ্ধ করেছে, তেমনি আলোড়িতও করেছে। ইন্দিরা দেবীকে লেখা এক চিঠিতে তিনি লেখেন, “পৃথিবী যে কী আশ্চর্য সুন্দরী এবং কী প্রশস্ত প্রাণ এবং গভীরভাবে পরিপূর্ণ তা এইখানে না এলে মনে পড়ে না।” তাঁর বোট ‘পদ্মা’য় ভেসে পদ্মা, ইছামতী, আত্রাই, নাগর বা চল বিলে তিনি যেভাবে ঘুরে বেড়াতেন, সেসব স্থানই তাঁর চিঠির পাতায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ফলে, ছিন্নপত্রে পূর্ববঙ্গের প্রসঙ্গ প্রত্যক্ষ ও গভীরভাবে প্রতিফলিত।

অন্যদিকে, মানসী একটি কাব্যগ্রন্থ, যেখানে প্রেম, প্রকৃতি ও দার্শনিক ভাবনার কবিতা থাকলেও পূর্ববঙ্গের নির্দিষ্ট উল্লেখ নেই। যোগাযোগ উপন্যাসটি শহরকেন্দ্রিক জীবন ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে লেখা, যেখানে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ অনুপস্থিত। কালান্তর একটি প্রবন্ধ সংকলন, যা মূলত সমাজ ও দর্শনকেন্দ্রিক, পূর্ববঙ্গ নিয়ে এতে আলাদা কোনো আলোচনা নেই।

সবদিক বিবেচনায়, রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্র-ই এমন একটি রচনা যেখানে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ববঙ্গ) প্রসঙ্গ সবচেয়ে প্রত্যক্ষভাবে উঠে এসেছে।
সুতরাং সঠিক উত্তর: গ) ছিন্নপত্র

Practice More Questions on Our App!

Download our app for free and access thousands of MCQ questions with detailed solutions