- সংস্কৃত 'সতী' শব্দটি দ্বারা আক্ষরিক অর্থে সতীমাধবী রমণীকে বোঝায় যিনি তার স্বামী ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি চূড়ান্ত সততা প্রদর্শন করেন।
- আর প্রচলিত সতীদাহ অর্থ হলো মৃত স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর সহমরণের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা।
- কবে এবং কিভাবে এ ধরণের আচার ধর্মীয় প্রথারূপে গড়ে উঠেছে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।
- অতীত বিশ্বের বহু সমাজে মানুষের এ আত্মাহুতি প্রথার অস্তিত্ব ছিল।
- গুপ্ত সাম্রাজ্যের পূর্ব হতেই এ প্রথার প্রচলন সম্পর্কে ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়।
- অতিমাত্রায় শোকের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে পতির মৃত্যুতে স্ত্রী স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই অগ্নিতে আত্মাহুতি দিত।
- কিন্তু, কালক্রমে পুরনো কাজটি ভয়ঙ্কর প্রথার রূপ নেয় যা ইংরেজ আমলেও চালু ছিল।
- এ সময়ে হিন্দু বিধবাদের জোর করে সতী হওয়ার জন্য বাধ্য করা হত।
- সতী করার পক্ষে পৌত্তলিকতাবাদীদের মত ছিল মূলত অল্পবয়সী বিধবাদের চারিত্রিক অধপতন যাতে না ঘটে, তার জন্যই সতীদাহ বাঞ্চনীয়।
- তবে আসল কারণ ছিল বিত্তশালী পরিবারের সম্পতি গ্রাস করা। একারণে অনেক সময় পুত্ররাও মাকে সতী হতে বাধ্য করবে।
- যদি কোন নারীর সন্তান এতই ছোট হয় যে নিজের দেখাশুনা করতে পারে না, যদি কোন নারী মাসিক চলার সময় থাকে, যদি তার গর্ভে বাচ্চা থাকে তবে তাকে সহমরণে নেওয়া হতো না ।
- সতীর দাহের পূর্বে নতুন পোশাক, অলঙ্কারে সজ্জিত করে কোন কোন সময় আকিম বা মাথার পেছনে আঘাত করিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় হাত পা বেঁধে পতির সাথে দাহ করা হত। এ সময় বিধবার কান্না, চিৎকার, বাঁচার ব্যাকুলতা বেরিয়ে না আসার জন্য ঢোল, শঙ্খসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র উচ্চশব্দে বাজানো হত।
- তুর্কি, মুঘল শাসকরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও এ প্রথার বিলুপ্ত করতে ব্যর্থ হন।
- অবশেষে, রাজা রামমোহন রায়ের অব্যাহত প্রচেষ্টায় লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক উপমহাদেশের ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায় সতীদাহ প্রথা রহিত করেন ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর।