বাক্য ভাষার প্রধান উপাদান। আর বাক্যের মৌলিক উপাদান হলো ‘শব্দ’। কয়েকটি শব্দ মিলিত হয়ে যদি একটি পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশ করে, তাহলে তাকে বাক্য বলে। যেমন: আমি কলেজে যাই।
ভাষাবিদগণ বাক্যকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন্-
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘যে পদ বা শব্দ-সমষ্টির দ্বারা কোন বিষয়ে বক্তার ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকটিত হয়, সেই পদ বা শব্দ সমষ্টিকে বাক্য বলে।’
সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘পরস্পর অর্থসম্বন্ধ বিশিষ্ট যে পদ গুলোর দ্বারা একটি সম্পূর্ণ ধারণা বা বক্তব্য বা ভাব প্রকাশ পায় সেই পদ গুলোর সমষ্টিকে বাক্য বলে।’
ভাষাবিদ্ জ্যোতিভূষণ চাকী বলেছেন, ‘যথাযথ বিন্যস্ত শব্দ-সমষ্টি যদি একটি সম্পূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে তাকে বাক্য বলে।’
একটি সার্থক বাক্যের তিনটি বৈশিষ্ঠ্য থাকে। এগুলো হচ্ছে
(ক) আকাঙ্ক্ষা
(খ) আসক্তি
(গ) যোগ্যতা
(ক) আকাঙ্ক্ষা: বাক্যের অর্থ পরিপূর্ণভাবে বোঝার জন্যে এক শব্দের পর পরবর্তী শব্দসমূহ শোনার যে বাসনা, তাই আকাঙ্ক্ষা। আকাঙ্ক্ষা যতক্ষণ না মিটবে, ততক্ষণ বাক্য হবে না। যেমন; ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা’ বললে আকাঙ্ক্ষা মিটে না, তাই বাক্য হয় না। কিন্তু ,যদি বলা হয়: ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেব।’ তাহলে আকাঙ্ক্ষা মেটে, ফলে সার্থক বাক্য সৃষ্টি হয়।
(খ) আসক্তি: বাক্যের শব্দগুলো এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে অর্থ প্রকাশে কোনোরূপ বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। বাক্যে এই ধরনের পদ বিন্যাসকে আসত্তি বলে। যেমন: ‘আমি পড়ি ফিউচার কমার্স কলেজে যাবৎ দুই বছর’ বললে আসত্তিহীনতার জন্যে বাক্য হবে না। আসত্তি রক্ষা করতে হলে বলতে হবে ‘আমি দুই বছর যাবৎ ফিউচার কমার্স কলেজে পড়ি।’
(গ) যোগ্যতা: বাক্যের শব্দসমূহের বাস্তবসম্মত অর্থসঙ্গতিকে যোগ্যতা বলে। যেমন: ‘ছাগলগুলো তাল গাছের পাতার উপর নাচছে’ বললে বাস্তবসম্মত কোনো অর্থ প্রকাশিত হয় না। কারণ এর যোগ্যতা নেই। যদি বলা হয়, ‘পাখিটি তাল গাছের পাতার উপর নাচছে’ তাহলে একটি যোগ্যতাসম্পন্ন বাক্য সৃষ্টি হয়।