বাক্যের গঠন নিয়ে যে শাখায় আলোচনা করা হয় তাকে
syntax(বাক্য প্রকরণ ) বলে ।
বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় : 4টি
ক. ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology): বর্ণ, সন্ধি, ণ-ত্ব বিধান, ষ-ত্ব বিধান, ধ্বনি পরিবর্তন ও লোপ, বর্ণের বিন্যাস।
খ. শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব (Morphology): লিঙ্গ, সমাস, বচন, ধাতু, সংখ্যাবাচক পদ, পদাশ্রিত নির্দেশক, দ্বিরুক্তি, ক্রিয়া, কাল, পুরুষ, উপসর্গ,
পদ, প্রকৃতি ও প্রত্যয়।
গ. বাক্যতত্ত্ব (Syntax): যতিচিহ্ন, বাগধারা, কারক বিশ্লেষণ, বাক্যের যোগ্যতা, বাক্যের উপাদান লোপ, পদক্রম, বাচ্য, উক্তি ও বাক্য সংক্রান্ত সকল বিষয়, পদের রূপ পরিবর্তন, বাক্যতত্ত্ব।
ঘ. অর্থতত্ত্ব (Semantic): শব্দ ও বাক্যের অর্থবিচার, বিপরীতার্থক, মুখ্যার্থ ও গৌণার্থ।
সুকুমার সেন, সুনীতিকুমার, জ্যােতিভূষণ চাকী, হুমায়ুন আজাদ-প্রমুখ বহু জ্ঞানী-গুণী মানুষ 'কারক'কে শব্দতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় হিসেবেই বলেছেন, কিন্তু স্বরোচিষ সরকার, তারিক মনজুর-প্রমুখ 'বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি' গ্রন্থে কারক-কে বাক্যতত্ত্বে আলোচ্য বিষয় বলা হয়েছে। আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের সূক্ষ্ম বিচারে 'কারক' বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রমের আলোচ্য বিষয় হওয়াটাই অধিক যুক্তিযুক্ত।
কারক কেন 'বাক্যতত্ত্বের' তা জেনে নিইঃ
'কলম' একটি শব্দ। আমি আপনাকে প্রশ্ন করলাম, ''বলুন তো, কলম কোন কারক?"
এই প্রশ্ন শোনে আপনি নিশ্চয় হাসাহাসি শুরু করবেন? কারণ 'কলম' একটি শব্দ আর শব্দের কখনো কারক হয় না। এখন প্রশ্ন হলো তাহলে কারক হয় কীসের?
উত্তর হলো, কারক হয় পদের। লক্ষ করুন।
আমি 'কলম' দিয়ে লিখি। এ-বাক্যে 'কলম' কোন কারক? এ-বার সবাই নির্দ্বিধায় উত্তর দেবেন, এ-বাক্যে কলম 'করণ' কারক। এখন আপনি কারক নির্ণয় করতে পেরেছেন, এর কারণ হলো 'কলম' এখন আর শব্দ নেই, কলম এখন পদ হয়ে গেছে। তার মানে, শব্দের কখনো কারক হয় না তাই কারককে শব্দতত্ত্বের মধ্যে না আনা শ্রেয়। ইতোমধ্যে আমরা জানলাম, কারক হয় পদের। তাই কারক পদক্রমের আলোচ্য বিষয় হওয়াটাই যৌক্তিক। তাছাড়া কারকের সংজ্ঞার মাঝেই লুকিয়ে আছে কারক কোন তত্ত্বে যাবে। কারকের সংজ্ঞা হলো, ''ক্রিয়াপদের সাথে নামপদের যে সম্পর্ক তাকে কারক বলে''। লক্ষ করুন, কারকের সম্পর্কটাই পদের সাথে, শব্দের সাথে নয়। তাই কারককে পদক্রমের আলোচ্য বিষয় বলতে চাই। আর আমরা জানি, পদক্রম অপর নাম বাক্যতত্ত্ব। (সংগ্রহীত)