১৯৪৬ সালের কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা ছিল ব্রিটিশ সরকারের একটি উদ্যোগ, যার মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছিল। এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি ফেডারেশন গঠন করা, যা ভারতকে ঐক্যবদ্ধ রাখবে এবং একইসঙ্গে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের (বিশেষত হিন্দু ও মুসলিম) স্বার্থ রক্ষা করবে।
কেবিনেট মিশনের প্রধান উদ্দেশ্যগুলো ছিল:
- ভারতের ঐক্য বজায় রাখা: মিশন চেয়েছিল ভারতকে বিভক্ত না করে একটি ফেডারেল কাঠামোর মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ রাখা।
- সংবিধান প্রণয়ন: একটি সংবিধান সভা (Constituent Assembly) গঠন করা, যেখানে ভারতীয় নেতারা মিলে দেশের ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নির্ধারণ করবেন।
- প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন: প্রদেশগুলোকে ব্যাপক স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যাতে তারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
- মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবির প্রত্যাখ্যান: মিশন পাকিস্তানের দাবি প্রত্যাখ্যান করে এবং একটি ফেডারেল কাঠামোর মাধ্যমে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোর স্বার্থ রক্ষার প্রস্তাব দেয়।
- অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন: একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা, যা ব্রিটিশ শাসনের অবসান পর্যন্ত প্রশাসন পরিচালনা করবে।
কেবিনেট মিশন পরিকল্পনার মূল প্রস্তাব:
- একটি
তিন-স্তরের শাসনব্যবস্থা প্রস্তাব করা হয়: কেন্দ্র, প্রাদেশিক গ্রুপ এবং প্রদেশ।
- কেন্দ্রীয় সরকার শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি এবং যোগাযোগের মতো বিষয়গুলো পরিচালনা করবে।
- প্রদেশগুলোকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়:
গ্রুপ A: হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ (যেমন: মাদ্রাজ, বোম্বে, বিহার)।
গ্রুপ B: মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ (যেমন: পাঞ্জাব, সিন্ধু)।
গ্রুপ C: বাংলা ও আসাম।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল:
কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা ভারতের স্বাধীনতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। এটি ভারতের বিভাজন এড়ানোর চেষ্টা করেছিল এবং একটি ফেডারেল কাঠামোর মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করতে চেয়েছিল। তবে, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, যা পরবর্তীতে ভারত বিভাজনের (Partition) দিকে নিয়ে যায়।