দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (185 টি প্রশ্ন )
প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলো এমন ঘটনা যা প্রাকৃতিক কারণে ঘটে এবং এর ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। যেমন - বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, খরা, সুনামি ইত্যাদি। এই ঘটনাগুলো মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

রাসায়নিক বিষক্রিয়া সাধারণত মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে ঘটে। যেমন - শিল্প কারখানার বর্জ্য, রাসায়নিক দুর্ঘটনা বা কীটনাশকের ভুল ব্যবহারের কারণে এটি হতে পারে। তাই এটি একটি মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়, প্রাকৃতিক নয়।
- অগ্ন্যুৎপাত একটি দ্রুত এবং আকস্মিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া।
- এটি ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা, গ্যাস এবং ছাই হঠাৎ করে ভূ-পৃষ্ঠে নির্গত হওয়ার একটি ঘটনা।
- এই প্রক্রিয়া খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘটে এবং এর প্রভাব তাৎক্ষণিক ও ব্যাপক হতে পারে।
- অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূ-প্রকৃতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে, যেমন নতুন ভূমিরূপ তৈরি হওয়া বা আশেপাশের পরিবেশ ধ্বংস হওয়া।
বাংলাদেশে ভূমিকম্পে কম ঝুকিপূর্ণ অঞ্চল হলো হলো যশোর,বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরগুনা, কুষ্টিয়া ,খুলনা, বরিশাল, প্রভৃতি ।
- বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং খরার পূর্বাভাস বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বেশ ভালোভাবেই সম্ভব।
- তবে ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে, বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া এখনো সম্ভব নয়।
- ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেন, যেমন ভূমিকম্পের তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ, ভূমিধ্বসের পরিমাপ, এবং ভূগর্ভস্থ তরলের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ।
- তবে এই পদ্ধতিগুলো এখনো পর্যায়ে পরীক্ষামূলক এবং ভূমিকম্পের সঠিক সময়, স্থান এবং তীব্রতা নির্ধারণে তেমন কার্যকর নয়।
• প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও এর ক্ষয়ক্ষতি কমানোর ব্যাপারে প্রতিরোধ কার্যক্রম সফলতা বয়ে আনতে পারে।
• দুর্যোগ প্রতিরোধের কাঠামোগত এবং অকাঠামোগত প্রশমনের ব্যবস্থা রয়েছে।
• কাঠামোগত প্রশমনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নির্মাণ কার্যক্রম যথা- বেড়িবাঁধ তৈরি, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, পাকা ও মজবুত ঘর-বাড়ি তৈরি, নদী খনন ইত্যাদি বাস্তবায়নকেই বোঝায়।
• কাঠামোগত দুর্যোগ প্রশমন খুবই ব্যয়বহুল, যা অনেক দরিদ্র দেশের পক্ষে বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
• অকাঠামোগত দুর্যোগ প্রতিরোধ যেমন- প্রশিক্ষণ, গণসচেতনতা বৃদ্ধি, পূর্বপ্রস্তুতি ইত্যাদি কার্যক্রম স্বল্প ব্যয়ে করা সম্ভব।
- ব্লু ইকোনমি হলো সমুদ্র সম্পদনির্ভর অর্থনীতি।
- এটি সাগরের জলরাশি ও তলদেশের সম্পদকে কাজে লাগিয়ে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার ধারণা।

- ১৯৯৪ সালে বেলজিয়ামের অর্থনীতিবিদ গ্রুন্টার পাউলি প্রথম "ব্লু ইকোনমি" ধারণাটি প্রদান করেন।
- বাংলাদেশের 'ব-দ্বীপ পরিকল্পনা - ২১০০' বাস্তবায়নে ব্লু ইকোনমির উপর জোর দেওয়া হয়।
চ্যালেঞ্জসমূহ:
- শক্তিশালী সমুদ্রনীতির অভাব
- দুর্বল সমুদ্র ব্যবস্থাপনা
- সামুদ্রিক দূষণ
- অপরিকল্পিত উপকূলীয় উন্নয়ন
- প্রযুক্তি ও দক্ষ জনশক্তির অভাব
- অপরিকল্পিত মৎস শিকার
- অপরিকল্পিত ট্যুরিজম

উল্লেখ্য,ঘন ঘন বন্যা ব্লু ইকোনমির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ নয়।
সিংহলিজ শব্দ 'সিডর' এর অর্থ চোখ। সাগরে উৎপন্ন তীব্রতাসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় হলো সিডর।

-৯ নভেম্বর ২০০৭ সালে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এলাকায় এর উৎপত্তি ঘটে, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে ১৫ নভেম্বর, ২০০৭ সালে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে বৃহত্তর খুলনা ও পটুয়াখালী অঞ্চলে আঘাত হানে।

-বাংলাদেশের উপকূলীয় ২২টি জেলা সিডরে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ১০ হাজার লোক নিহত হয়।
ভূ-অভ্যন্তরে কোনো কারণে দ্রুত বিপুল শক্তি মুক্ত হওয়ায় ভূ-পৃষ্ঠে যে প্রবল ঝাঁকুনি বা কম্পনের সৃষ্টি হয়, তাকে ভূমিকম্প বলে।
ভূমিকম্প সৃষ্টির জন্য এক ধরনের তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। এ তরঙ্গ উৎপত্তিস্থল থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

-ভূমিকম্প সৃষ্টির উৎপত্তিস্থলকে কেন্দ্র (Focus) বলে।
-কেন্দ্র থেকে লম্বালম্বিভাবে ভূ-পৃষ্ঠের উপরিস্থ বিন্দু উপকেন্দ্র এপিসেন্টার(Epicentre) হিসেবে পরিচিত।
-ভূমিকম্প কেন্দ্রের গভীরতা ৫ থেকে ১১০০ কিলোমিটারের বেশি হতে পারে।

ভূকম্পন কেন্দ্রের অবস্থানের ভিত্তিতে কেন্দ্রকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:-
১.অগভীর কেন্দ্ৰ ৫-৬০ কি.মি.,
২.মাঝারি কেন্দ্র ৬০-৩০০ কি.মি. এবং
৩.গভীর কেন্দ্র ৩০০ কি.মি. এর অধিক।
ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে প্রধান হলো সমুদ্রের তাপমাত্রা ও করিওলিস শক্তি।

সমুদ্রের তাপমাত্রা:
ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমপক্ষে ২৬-২৭° সেলসিয়াস হতে হয় এবং এ তাপমাত্রা প্রায় ৫০ মিটার গভীর পর্যন্ত বজায় থাকতে হয়। এজন্য সাধারণত কর্কট ও মকর ক্রান্তিরেখার কাছাকাছি অবস্থিত সমুদ্র অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে বা গ্রীষ্মের শেষে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।

পৃথিবীর ঘোরা (করিওলিস শক্তি):
নিরক্ষীয় অঞ্চলে গরমে উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু ওপরে উঠে গেলে সৃষ্ট শূন্যস্থান পূরণে মেরু অঞ্চল থেকে ঠান্ডা বায়ু প্রবাহিত হয়। কিন্তু পৃথিবীর ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট করিওলিস শক্তি বায়ুকে সোজাসুজি না চালিয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বাঁকিয়ে দেয়। এর ফলে ঘূর্ণিবায়ুর আবর্তন সৃষ্টি হয়।

- উত্তর গোলার্ধে ঘূর্ণিঝড় ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে
- দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকেই ঘুরে থাকে।

এই কারণে, সাধারণত নিরক্ষরেখার ৫° থেকে ৩০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। নিরক্ষরেখার ৫°–২০° অঞ্চলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।

এভাবে উষ্ণ সমুদ্রজল এবং পৃথিবীর ঘূর্ণনের প্রভাবে সৃষ্ট করিওলিস শক্তির সম্মিলনে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।

ফ্রিতে ২ লাখ প্রশ্নের টপিক, সাব-টপিক ভিত্তিক ও ১০০০+ জব শুলুশন্স বিস্তারিতে ব্যাখ্যাসহ পড়তে ও আপনার পড়ার ট্র্যাকিং রাখতে সাইটে লগইন করুন।

লগইন করুন

- বাংলাদেশে সংঘটিত বন্যাকে সাধারণত তিনটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো:

মৌসুমি বন্যা (Monsoon Flood):
- এই বন্যা ঋতুগত এবং বর্ষাকালে (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) ঘটে।
- নদনদীর পানি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করে।
- এটি দীর্ঘস্থায়ী এবং জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।

আকস্মিক বন্যা (Flash Flood):
- পাহাড়ি ঢল বা স্বল্প সময়ে অতিবৃষ্টির কারণে আকস্মিকভাবে এই বন্যা ঘটে।
- এটি সাধারণত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং পাহাড়ি এলাকায় দেখা যায়।
- এর স্থায়িত্ব কম হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়।

জোয়ারসৃষ্ট বন্যা (Tidal Flood):
- উপকূলীয় এলাকায় জোয়ার-ভাটার প্রভাবে এই বন্যা ঘটে।
- বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের সময় এটি বেশি দেখা যায়।
- এর উচ্চতা সাধারণত ৩ থেকে ৬ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
কালবৈশাখী = North westerlies
- জলজ আবহাওয়াজনিত (hydro-meteorological) দুর্যোগ হলো এমন দুর্যোগ যা আবহাওয়া, জলবায়ু এবং পানির সাথে সম্পর্কিত।
- উদাহরণস্বরূপ, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধস, এবং নদীভাঙ্গন এই ধরনের দুর্যোগের অন্তর্ভুক্ত।
- তবে ভূমিকম্প একটি ভূতাত্ত্বিক (geological) দুর্যোগ, যা পৃথিবীর অভ্যন্তরে টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়ার কারণে ঘটে।
- এটি আবহাওয়া বা জলবায়ুর সাথে সম্পর্কিত নয়।
- সুতরাং, ভূমিকম্প জলজ আবহাওয়াজনিত দুর্যোগের অন্তর্ভুক্ত নয়।
নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বিশেষ। সাধারণভাবে এই জাতীয় ঘূর্ণিঝড়কে সাধারণভাবে বলা হয় সাইক্লোন (Cyclone)। গ্রিক kyklos শব্দের অর্থ হলো বৃ্ত্ত। এই শব্দটি থেকে উৎপন্ন শব্দ হলো kykloun। এর অর্থ হলো- আবর্তিত হওয়া। এই শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হয়েছে kyklōma । এই শব্দের অর্থ হলো- চক্র বা কুণ্ডলিত। ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ-ভারতীয় আবহাওয়াবিদ হেনরী পিডিংটন তাঁর সামুদ্রিক দুর্যোগ বিষয়ক গ্রন্থ, The Sailor's Horn-book for the Law of Storms-এতে Cyclone শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। উল্লেখ্য বাংলায় সাইক্লোন শব্দটি গৃহীত হয়েছে ইংরেজি থেকে।

ঘূর্ণিঝড় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন-
- ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে 'সাইক্লোন'
- অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে 'সাইক্লোন' 
- আমেরিকায় হ্যারিকেন নামে পরিচিত,
- জাপানের উপকূলে 'টাইফুন'
- ফিলিপাইনে 'বাগিও'
- মেক্সিকো উপকূলে 'হ্যারিকেন' ইত্যাদি।
- সমুদ্র উপকূলীয় বেষ্টনী প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
- এই প্রকল্পের আওতায় উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা হয়, যা জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।
- এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) এই প্রকল্পে অর্থায়ন করে থাকে।
- তারা উপকূলীয় অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়তা প্রদান করে।
- ইউনেস্কো, বিশ্বব্যাংক, বা আইডিএ এই প্রকল্পে সরাসরি অর্থায়নকারী নয়।
- IPCC-এর পূর্ণরূপ হলো Intergovernmental Panel on Climate Change।
- এটি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিজ্ঞান মূল্যায়নের জন্য জাতিসংঘের একটি আন্তঃসরকার সংস্থা।
- ১৯৮৮ সালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO) এবং জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP) যৌথভাবে এটি প্রতিষ্ঠা করে।
- এর সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়।
- সিংহলিজ শব্দ 'সিডর' এর অর্থ চোখ
- সাগরে উৎপন্ন তীব্রতাসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় হলো সিডর।
- ৯ নভেম্বর ২০০৭ সালে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এলাকায় এর উৎপত্তি ঘটে, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে ১৫ নভেম্বর, ২০০৭ সালে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে বৃহত্তর খুলনা ও পটুয়াখালী অঞ্চলে আঘাত হানে।
- বাংলাদেশের উপকূলীয় ২২টি জেলা সিডরে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ১০ হাজার লোক নিহত হয়।
- বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড়প্রবণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে খুলনা অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- খুলনা অঞ্চল বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকায় অবস্থিত।
- এই অঞ্চলটি ঘূর্ণিঝড়ের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলো সাধারণত উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও এর আশপাশের এলাকায় আঘাত হানে।
- খুলনা অঞ্চলের একটি বড় অংশ সুন্দরবনের কাছাকাছি। সুন্দরবন কিছুটা প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করলেও ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা এবং জলোচ্ছ্বাসের কারণে এই অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
- অতীতে সিডর (২০০৭), আইলা (২০০৯), এবং বুলবুল (২০১৯) এর মতো বড় ঘূর্ণিঝড় খুলনা অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এই ঘূর্ণিঝড়গুলোতে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ফসল, ঘরবাড়ি, ও গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
- ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস খুলনা অঞ্চলের কৃষিজমিতে লবণাক্ততা বাড়িয়ে দেয়, যা কৃষি উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে।
নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বিশেষ। সাধারণভাবে এই জাতীয় ঘূর্ণিঝড়কে সাধারণভাবে বলা হয় সাইক্লোন (Cyclone)। গ্রিক kyklos শব্দের অর্থ হলো বৃ্ত্ত। এই শব্দটি থেকে উৎপন্ন শব্দ হলো kykloun। এর অর্থ হলো- আবর্তিত হওয়া। এই শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হয়েছে kyklōma । এই শব্দের অর্থ হলো- চক্র বা কুণ্ডলিত। ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ-ভারতীয় আবহাওয়াবিদ হেনরী পিডিংটন তাঁর সামুদ্রিক দুর্যোগ বিষয়ক গ্রন্থ, The Sailor's Horn-book for the Law of Storms-এতে Cyclone শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। উল্লেখ্য বাংলায় সাইক্লোন শব্দটি গৃহীত হয়েছে ইংরেজি থেকে।

ঘূর্ণিঝড় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন-
- ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে 'সাইক্লোন'
- অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে 'সাইক্লোন' 
- আমেরিকায় হ্যারিকেন নামে পরিচিত,
- জাপানের উপকূলে 'টাইফুন'
- ফিলিপাইনে 'বাগিও'
- মেক্সিকো উপকূলে 'হ্যারিকেন' ইত্যাদি।

ফ্রিতে ২ লাখ প্রশ্নের টপিক, সাব-টপিক ভিত্তিক ও ১০০০+ জব শুলুশন্স বিস্তারিতে ব্যাখ্যাসহ পড়তে ও আপনার পড়ার ট্র্যাকিং রাখতে সাইটে লগইন করুন।

লগইন করুন
মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর প্রতিকূল প্রভাব রয়েছে এমন যে কোনো প্রাকৃতিক ঘটনাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। স্বভাবতই উন্নত দেশসমূহের অধিবাসীদের তুলনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে উন্নয়নশীল দেশসমূহের অধিবাসীদের ঝুঁকির মাত্রা অধিক। প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ তিনটি বৃহৎ বিভাগভুক্ত-

ক) বায়ুমণ্ডলীয় প্রক্রিয়াসৃষ্ট Climatic বা বায়ুমণ্ডলীয় দুর্যোগসমূহ: ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী, টর্নেডো, হারিকেন, খরা, ইত্যাদি।

খ) ভূ-পৃষ্ঠে প্রক্রিয়া সৃষ্ট Exogenetic দুর্যোগসমূহ: বন্যা, নদীভাঙন, উপকূলীয় ভাঙন, ভূমিধস, মৃত্তিকা ক্ষয়, প্রাকৃতিক ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ।

গ) পৃথিবীপৃষ্ঠের অভ্যন্তরস্থ প্রক্রিয়াসৃষ্ট Endogentic ভূগর্ভস্থ দুর্যোগসমূহ: ভূমিকম্প এবং অগ্ন্যুৎপাত।

বাংলাদেশে বায়ুমণ্ডলীয় দুর্যোগ এবং এক্সোজেনিক দুর্যোগের ঝুঁকি অধিক এবং এখানে ভূগর্ভস্থ দুর্যোগের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২ অনুসারে দুর্যোগ অর্থ প্রকৃতি বা মনুষ্য সৃষ্টি অথবা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ঘটনা।

দুর্যোগকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ।

জাতিসংঘের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান (United Nations Institute for Training and Research) দুর্যোগসমূহকে চার ভাগে ভাগ করেছেন। যথা:
১. প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, টর্নেডো, নদীভাঙন, ভূমিকম্প, ইত্যাদি।
২. দীর্ঘস্থায়ী দুর্যোগ: মহামারী, খরা, ইত্যাদি।
৩. মনুষ্য সৃষ্ট দূর্যোগ: যুদ্ধ, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পরিবেশ দূষণ, ইত্যাদি।
৪. দুর্ঘটনাজনিত দুর্যোগ: সড়ক দুর্ঘটনা।

বাংলাদেশের দুর্যোগের ধরণ ও প্রকৃতি:
দুর্যোগ ব্যবস্থা সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনায় ১৩টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো- বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, নদীভাঙন, ভূমিকম্প, খরা, আর্সেনিক দূষণ, লবণাক্ততা, সুনামি, অগ্নিকাণ্ড, ভূমিধস ও বজ্রপাত। ১৭ মে, ২০১৬ বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থা সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনায় ১৩টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো- বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, নদীভাঙন, ভূমিকম্প, খরা, আর্সেনিক দূষণ, লবণাক্ততা, সুনামি, অগ্নিকাণ্ড, ভূমিধস ও বজ্রপাত। ১৭ মে, ২০১৬ বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ এর ক্ষমতাবলে সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৫ প্রণয়ন করে । যা ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয় , এতে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা ও হুশিয়ারি সংকেত হিসেবে সমুদ্রবন্দরের জন্য ১১ টি ও নদী বন্দরের জন্য ৪ টি সংকেত নির্ধারণ করা হয়।
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় "সাড়াদান" ধাপটি মূলত দুর্যোগ সংঘটিত হওয়ার পরপরই দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদানের জন্য কার্যকর।
- এই ধাপে প্রধান কাজ হলো দুর্গতদের জরুরি সহায়তা প্রদান করা।
এর মধ্যে রয়েছে:

• খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ।
• আহতদের চিকিৎসা সেবা প্রদান।
• দুর্গত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা।
• আশ্রয়হীনদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা।

- এই ধাপটি দুর্যোগের তাৎক্ষণিক প্রভাব কমাতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- অন্যদিকে, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, পুনর্বাসন এবং প্রশমন ধাপগুলো দুর্যোগ পূর্ব বা পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমের অংশ। সেজন্য "সাড়াদান" ধাপের মূল কাজ হলো দুর্গতদের ত্রাণ বিতরণ।
- বাংলাদেশে বন্যার প্রধান কারণ হলো উজানে ভারী বৃষ্টিপাত।
- বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলো, যেমন গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা, হিমালয় থেকে উৎপন্ন।
- বর্ষাকালে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে এই নদীগুলোর পানির স্তর দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- উজানের এই অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশের নদীগুলোতে প্রবাহিত হয়ে তীর উপচে পড়ে এবং বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করে।
- এছাড়াও, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং সমতল ভূমি বন্যার ঝুঁকি বাড়ায়। যদিও নদীর তলদেশ ভরাট, বাঁধ নির্মাণ এবং বৃক্ষ নিধন বন্যার কারণ হিসেবে ভূমিকা রাখে, তবে উজানে ভারী বৃষ্টিপাতই সবচেয়ে বড় এবং প্রধান কারণ।
বিশ্বব্যাংক ২০০৯ সালে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সৃষ্ট ৫টি প্রধান ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশ এই ঝুঁকিগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে বিশেষভাবে সংবেদনশীল।

- বন্যা: বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে বন্যা ঝুঁকির দিক থেকে সবচেয়ে সংবেদনশীল দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
- ঝড়: ঝড়ের ঝুঁকির দিক থেকেও বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়।
- সমুদ্রস্তর বৃদ্ধি: সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দশম স্থানে রয়েছে।
• ভূকম্পনীয় মূল কেন্দ্রের বণ্টন এবং বিভিন্ন ভূ-গাঠনিক ব্লকের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে তিনটি সাধারণীকৃত ভূকম্পন অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে, যথা অঞ্চল-১, অঞ্চল-২ ও অঞ্চল-৩।
- বাংলাদেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলকে নিয়ে গঠিত অঞ্চল-১ হচ্ছে সবচেয়ে সক্রিয় অঞ্চল, যার মৌলিক ভূকম্পনীয় সহগ হচ্ছে ০.০৮। এই অঞ্চল পূর্ব সিলেটের ডাউকি চ্যুতি ব্যবস্থা, গভীর প্রোথিত সিলেট চ্যুতি এবং জাফলং ঘাত, নাগা ঘাত ও ডিসাং ঘাতের সঙ্গে উচ্চ সক্রিয় দক্ষিণ-পূর্ব আসামের অঞ্চলসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে।
- অঞ্চল-২-এর মধ্যে রয়েছে বরেন্দ্র ও মধুপুরের সম্প্রতি উত্থিত প্লাইসটোসিন ব্লকের অঞ্চলসমূহ এবং বলিত বলয়ের পশ্চিমা সম্প্রসারণ।
- অঞ্চল-৩ ভূকম্পায়িতভাবে আনুমানিক মৌলিক ভূকম্পনীয় সহগ ০.০৪-এর সঙ্গে প্রায় অভিন্ন। অঞ্চলটি দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করে ও ভূকম্পনীয়ভাবে শান্ত।
- আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া সমুদ্রবন্দর সমূহের জন্যে সংকেত ১১টি।
- এগুলো হলো:
• ১-নং দূরবর্তী সতর্ক সংকেত,
• ২-নং দূরবর্তী হুশিয়ারি সংকেত,
• ৩-নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত,
• ৪-নং স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত,
• ৫-নং বিপদ সংকেত,
• ৬-নং বিপদ সংকেত,
• ৭-নং বিপদ সংকেত,
৮-নং মহাবিপদ সংকেত,
• ৯-নং মহাবিপদ সংকেত,
• ১০-নং মহাবিপদ সংকেত,
• ১১-নং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত।
- বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় নদীভাঙন এ দেশের জন্য নিয়মিত সমস্যা বলা যায়।
- নদীভাঙনের কয়েকটি কারণ হলোঃ জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর প্রবাহপথ ও তীব্র গতিবেগ, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, নদীগর্ভে শিলার উপাদান, রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি, বাহিত শিলার কঠিনতা, নদীগর্ভে ফাটলের উপস্থিতি, বৃক্ষনিধন ইত্যাদি।
- দুর্বল ও অপরিণত মাটির কারণে সবচেয়ে বেশি ভেঙেছে মাওয়া, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর।

ফ্রিতে ২ লাখ প্রশ্নের টপিক, সাব-টপিক ভিত্তিক ও ১০০০+ জব শুলুশন্স বিস্তারিতে ব্যাখ্যাসহ পড়তে ও আপনার পড়ার ট্র্যাকিং রাখতে সাইটে লগইন করুন।

লগইন করুন
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রধান উদ্দেশ্য তিনটি হলো-
(ক) দুর্যোগকালিন সময়ে জীবন, সম্পদ ও পরিবেশের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো বা পরিমাণ হ্রাস করা;
(খ) দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের মধ্যে দ্রুত প্রয়োজনীয় ত্রাণ পৌঁছানো ও পূণর্বাসন নিশ্চিত করা এবং
(গ) দুর্যোগ পরবর্তী পুনরুদ্ধার কাজ সুষ্ঠুরূপে সম্পন্ন করা।
সঠিক উত্তর: 0 | ভুল উত্তর: 0