মধ্যযুগ (1013 টি প্রশ্ন )
- বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগের আদি কবি বড়ু চণ্ডীদাস ভাগবতের কৃষ্ণলীলা সম্পর্কিত কাহিনী অবলম্বনে, জয়দেবের গীতগোবিন্দ কাব্যের প্রভাব স্বীকার করে, লোকসমাজে প্রচলিত রাধা-কৃষ্ণের প্রেম সম্পর্কিত গ্রাম্য গল্প অবলম্বনে ৪১৮টি পদ, ১৬১টি শ্লোক ও ১৩টি খণ্ডের মাধ্যমে খাঁটি বাংলা ভাষায় রচিত মধ্যযুগের প্রথম কাব্য 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' রচনা করেন।
- ১৯০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার কাকিল্যা গ্রামের দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় নামক এক ব্রাহ্মণের বাড়ির গোয়ালঘর থেকে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ এটি উদ্ধার করেন।
- পরে তিনি ১৯১৬ সালে 'বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ' থেকে এটি প্রকাশ করেন।
- চরিত্র তিনটি: রাধা (জীবাত্মা বা প্রাণীকুল), কৃষ্ণ (পরমাত্মা বা ঈশ্বর) ও বড়ায়ি (রাধাকৃষ্ণের প্রেমের দূতি)।
- সপ্তদশ শতকের বাঙালি কবি দৌলত কাজী আরাকান রাজসভার আশ্রয়ে-এ 'সতীময়না ও লোরচন্দ্রানী' কাব্য রচনা শুরু করেন।
- এটি হিন্দি কবি সাধনের 'মৈনাসত' কাব্য অবলম্বনে রচিত।
- কাব্যটি সমাপ্ত করার পূর্বেই দৌলত কাজীর মৃত্যু হয়।
- পরবর্তীকালে আরাকান রাজসভার আরেক বিশিষ্ট কবি আলাওল এই অসমাপ্ত কাব্যের সমাপ্তি ঘটান।
- জ্ঞানদাস ষোড়শ শতকের একজন প্রখ্যাত বৈষ্ণব পদকর্তা ছিলেন।
- 'মুরলীশিক্ষা' তাঁর রচিত একটি উল্লেখযোগ্য গীতিকাব্য।
- তাঁর রচিত পদাবলীতে প্রেম ও ভক্তির গভীর আর্তি ফুটে উঠেছে।
- তাঁর লেখা "রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর" এবং "সুখের লাগিয়ে এ ঘর বান্ধিলুঁ" ইত্যাদি পদ বৈষ্ণব সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
- জ্ঞানদাসকে চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য মনে করা হয় এবং তাঁর পদে চণ্ডীদাসের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

অন্যদিকে,
- 'পদকল্পতরু': এটি একটি বৈষ্ণব পদ সংকলন গ্রন্থ, যা বৈষ্ণবদাস সংকলন করেন।
- 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন': এটি বড়ু চণ্ডীদাস রচিত একটি আখ্যানকাব্য।
- 'বিদগ্ধমাধব': এটি রূপ গোস্বামী রচিত একটি সংস্কৃত নাটক।
- বৈষ্ণব পদকর্তা গোবিন্দদাসকে 'কবিরাজ' উপাধি প্রদান করেন শ্রীনিবাস আচার্য।
- গোবিন্দদাস ছিলেন চৈতন্য-পরবর্তী যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি এবং তাঁকে 'দ্বিতীয় বিদ্যাপতি' বলেও অভিহিত করা হয়।
- তাঁর পদে বিদ্যাপতির প্রভাব থাকলেও, তিনি ভক্তি ও রসের গভীরতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেন।
- জীব গোস্বামী গোবিন্দদাসকে 'কবীন্দ্র' উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।
- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন মধ্যযুগের প্রথম কাব্য এবং বড় চণ্ডীদাস মধ্যযুগের আদি কবি।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের অপর নাম ‘শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ’৷ ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' নামটি রাখেন বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ।
- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে মােট তেরােটি খণ্ড আছে ।  যথা:
১. জন্ম খণ্ড,
২. তাম্বুল খণ্ড,
৩. দান খণ্ড,
৪. নৌকা খণ্ড,
৫. ভার খণ্ড,
৬. ছত্র খণ্ড,
৭. বৃন্দাবন খণ্ড,
৮. কালিয়দমন খণ্ড,
৯. যমুনা খণ্ড,
১০. হার খণ্ড,
১১. বাণ খণ্ড,
১২. বংশী খণ্ড,
১৩. বিরহ খণ্ড।
- সৈয়দ হামজা ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর একজন উল্লেখযোগ্য মুসলিম কবি।
- যদিও "আমীর হামজা" এবং "হাতেম তাই"-এর মতো পুঁথি সাহিত্য রচনা করে তিনি বেশি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তাঁর কবি প্রতিভার প্রথম প্রকাশ ঘটেছিল রোমান্টিক প্রণয়কাব্য "মধুমালতী"-তে।
- এই কাব্যটি তিনি ১৭৮৮-৮৯ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন।
- এটি মনঝন নামক একজন হিন্দি কবির "মধুমালত" কাব্যের ভাবানুবাদ।
- সৈয়দ হামজার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে "আমীর হামজা", "হাতেম তাই" এবং "জৈগুনের পুঁথি"।
- দৌলত উজির বাহরাম খান বিরচিত লায়লী-মজনু কাব্য রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান কাব্যধারায় একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে স্থান পেয়েছে। 
- পারসিয়ান কবি জামির 'লায়লা ওয়া মজুনুন' থেকে বাংলায় 'লায়লী -মজনু' নামে অনুবাদ করেন দৌলত উজির বাহরাম খান ।
- এর উৎস ইরানকেন্দ্রিক আরবি লোকগাঁথা ।
- চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মের আগেই বাংলায় ভাগবত পুরাণকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করার কৃতিত্ব মালাধর বসুর।
- তিনি পঞ্চদশ শতকে ভাগবতের দশম ও একাদশ স্কন্ধ অবলম্বনে 'শ্রীকৃষ্ণবিজয়' কাব্য রচনা করেন।
- এটিই বাংলা ভাষায় প্রথম ভাগবতের অনুবাদ এবং শ্রীকৃষ্ণ বিষয়ক প্রথম কাব্য।
- এই কাব্য রচনার জন্য তৎকালীন গৌড়ের সুলতান রুকনুদ্দিন বারবক শাহ তাঁকে 'গুণরাজ খান' উপাধিতে ভূষিত করেন।
- মালাধর বসুর সুললিত ও সাবলীল অনুবাদের ফলেই ভাগবতের কৃষ্ণ-কাহিনী বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় এবং পরবর্তী বৈষ্ণব আন্দোলনের পথকে সুগম করে তোলে।
এন্টনি ফিরিঙ্গির জীবনকাল ছিল আনুমানিক ১৭৭০ থেকে ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। যেহেতু তাঁর জন্ম ও কাব্যচর্চার সূচনা আঠার শতকে হয়েছিল, তাই তাকে আঠার শতকের কবি হিসেবেই গণ্য করা হয়। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি কবিয়াল (কবিগানের শিল্পী) এবং জাতিতে পর্তুগিজ। ইউরোপীয় হওয়ার কারণে তাকে 'ফিরিঙ্গি' নামে ডাকা হতো।

- এন্টনি ফিরিঙ্গির প্রকৃত নাম ছিল এন্টনি হেন্সম্যান।
- তিনি একজন হিন্দু ব্রাহ্মণ বিধবা নারীকে সতীদাহের চিতা থেকে উদ্ধার করে বিয়ে করেছিলেন।
- কলকাতার বউবাজারে বিখ্যাত 'ফিরিঙ্গি কালী মন্দির' তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন।

ফ্রিতে ২ লাখ প্রশ্নের টপিক, সাব-টপিক ভিত্তিক ও ১০০০+ জব শুলুশন্স বিস্তারিতে ব্যাখ্যাসহ পড়তে ও আপনার পড়ার ট্র্যাকিং রাখতে সাইটে লগইন করুন।

লগইন করুন
অষ্টাদশ শতাব্দীর দোভাষী পুঁথি সাহিত্যের ধারার প্রবর্তক বা আদি কবি ছিলেন ফকির গরীবুল্লাহ। তবে এই ধারাটিকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেওয়ার কৃতিত্ব দেওয়া হয় কবি সৈয়দ হামজাকে। তাকে এই ধারার দ্বিতীয় প্রধান ও সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি হিসেবে গণ্য করা হয়।

- দোভাষী পুঁথি সাহিত্য আরবি-ফারসি-হিন্দি শব্দ মিশ্রিত 'মুসলমানি বাংলা' রীতিতে রচিত হতো।
- সৈয়দ হামজা ফকির গরীবুল্লাহর লেখা অসমাপ্ত কাব্য 'আমীর হামজা' সমাপ্ত করেছিলেন, যা তাদের যৌথ প্রয়াস হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
- তাঁর কাব্যে যুদ্ধ, প্রেম, ইসলামি ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মাহাত্ম্য প্রাধান্য পেত, যা তৎকালীন মুসলিম সমাজে ব্যাপক সমাদর লাভ করেছিল।
কবি কঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার দামুন্যা গ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল হৃদয় মিশ্র এবং মাতার নাম ছিল দৈবকী। ডিহিদার মামুদ শরিফের অত্যাচারের কারণে তিনি তাঁর পৈতৃক নিবাস ত্যাগ করে মেদিনীপুর জেলার আড়রা গ্রামে জমিদার বাঁকুড়া রায়ের আশ্রয় লাভ করেন এবং সেখানেই তাঁর বিখ্যাত কাব্য রচনা করেন।
মানিক দত্ত মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য ধারার চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আদি কবি হিসেবে পরিচিত। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার ফুলুয়া (বর্তমান ফুলবাড়িয়া) অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীকালের বিখ্যাত কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী তাঁর কাব্যে একাধিকবার মানিক দত্তের নাম উল্লেখ করেছেন, যা থেকে মানিক দত্তকে চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের প্রাচীনতম কবি হিসেবে গণ্য করা হয়। কথিত আছে, তিনি শৈশবে বিকলাঙ্গ ছিলেন এবং দেবী চণ্ডীর কৃপায় আরোগ্য লাভ করার পর কাব্য সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।
কানাহরি দত্তকে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের মনসামঙ্গল কাব্যের আদি বা প্রথম কবি হিসেবে গণ্য করা হয়।  তাঁর রচিত মনসামঙ্গল কাব্যটির নাম ছিল 'পদ্মার সর্প সজ্জা'। কথিত আছে যে, তাঁর এই কাব্যের প্রচলন আসাম থেকে বিহার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

দুর্ভাগ্যবশত, কানাহরি দত্তের রচিত কোনো কাব্য বর্তমানে পাওয়া যায় না। সময়ের সাথে সাথে তাঁর লেখা বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়।
পরবর্তী কবি বিজয় গুপ্তের রচনা থেকে কানাহরি দত্ত সম্পর্কে জানা যায়। বিজয় গুপ্ত লিখেছিলেন, "প্রথমে রচিল গীত, কানাহরি দত্ত"।
- ‘ফুল্লরার বারমাস্য’ হলো চন্ডীমঙ্গল কাব্যের অন্তর্গত।

- ফুল্লরা চণ্ডীমঙ্গলের অন্যতম প্রধান নায়িকা চরিত্র হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।
- বারমাস্যা বা বারোমাসী শব্দের দ্বারা বোঝানো হয় একটি পূর্ণ বছরের (বারো মাসের) বিবরণ।
- প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের লৌকিক কাহিনি বর্ণানায় নায়ক-নায়িকাদের বারো মাসের সুখ-দুঃখের বিবরণ প্রদানের রীতি দেখা যায়।
- এই কারণেই এ ধরনের রচনাকে বারমাস্যা বা বারোমাসী নামে অভিহিত করা হয়।
- খাঁটি বাংলা ভাষায় রচিত বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগের আদি নিদর্শন 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন', যা কবি বড়ু চণ্ডীদাস ভাগবতের কৃষ্ণলীলা সম্পর্কিত কাহিনী অবলম্বনে, জয়দেবের গীতগোবিন্দ কাব্যের প্রভাব স্বীকার করে, লোকসমাজে প্রচলিত রাধা-কৃষ্ণের প্রেম সম্পর্কিত গ্রাম্য গল্প অবলম্বনে ৪১৮টি পদ, ১৬১টি শ্লোক ও ১৩টি খণ্ডের মাধ্যমে রচনা করেন।
- ১৯০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার কাকিল্যা গ্রামের দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় নামক এক ব্রাহ্মণের বাড়ির গোয়ালঘর থেকে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ এটি উদ্ধার করেন।
- পরে তিনি ১৯১৬ সালে 'বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ' থেকে এটি প্রকাশ করেন।
ড. মুহম্মদ এনামুল হক (২০ সেপ্টেম্বর ১৯০২ - ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২) ছিলেন একজন বাঙালি শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ ও সাহিত্যিক। তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার বখতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯২৯ হতে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি পেয়ে এনামুল হক অধ্যাপক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের অধীনে গবেষণা করেন।
তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল ‘History of Sufism in Bengal’। ১৯৩৫ সালে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৫৬ সালের ১ ডিসেম্বর মুহম্মদ এনামুল হক (১৯০২-১৯৮২) একাডেমীর প্রথম পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- আরাকান রাজসভায় বাঙ্গালা সাহিত্য (গবেষণামূলক, আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদের সঙ্গে যৌথভাবে রচিত), ১৯৩৫;
- বঙ্গে সূফী প্রভাব (গবেষণামূলক), ১৯৩৫;
- বাঙলা ভাষার সংস্কার (ভাষাতত্ত্বমূলক), ১৯৪৪;
- মুসলিম বাঙলা সাহিত্য (গবেষণামূলক), ১৯৫৭;
- ভ্রমণকািহিনী (বুলগেরিয়ার ভ্রমণ), ১৯৭৮
- গীতি সংকলন ( আবাহন), ১৯২০-২১
- কবিতা সংকলন (ঝর্ণাধারা), ১৯২৮
- A History of Sufism in Bengal, ১৯৭৬;
- Perso-Arabic Elemants in Bengali (with GM Hilali), ১৯৬৭;

এছাড়াও
এতদ্ব্যতীত তিনি Abdul Karim Shahityavisharad Commemoration Volume (১৯৭২) ও Dr. Md. Shahidullah Felicitation (১৯৬৬) গ্রন্থদ্বয় সম্পাদনা করেন।
আলাওল:
- তিনি বাংলা সাহিত্যের মুসলমান কবিদের মধ্যে অন্যতম প্রধান কবি। তাঁর রচিত "পদ্মাবতী" একটি গুরুত্বপূর্ণ কাব্য, যা হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির মিলন ঘটায়।
- আলাওল সপ্তদশ শতকের (১৬০৭-১৬৮০)কবি।
- তিনি মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি।
- মহাকবি আলাওলের সমসাময়িক আরাকানের রাজা ছিলেন রাজা সুধর্মা।
- আলাওল মধ্যযুগের সর্বাধিক গ্রন্থপ্রণেতা। তাঁর মোট কাব্যসংখ্যা সাত।
- আরাকানের প্রধান অমাত্য মাগন ঠাকুর তাকে কাব্যরচনায় উৎসাহিত করেছেন।
- চণ্ডীদাস মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি।
- তিনি ভক্তিরসের কবিতা রচনা করেছেন, যা বৈষ্ণব ধর্মের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছে। তাঁর রচিত "শ্রীকৃষ্ণকীর্তন" উল্লেখযোগ্য।
- বাংলা ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলির আদি কবি চণ্ডীদাস। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চণ্ডীদাসকে ‘দুঃখবাদী কবি’ বলেছেন।
তাঁর বিখ্যাত পঙ্ক্তি-
- ‘সই কেমনে ধরিব হিয়া / আমার বঁধূয়া আন বাড়ী যায় / আমার আঙিনা দিয়া।'
- ‘সই কেবা শুনাইল শ্যাম নাম।'
- 'শুনহ মানুষ ভাই / সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই।'
- মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য এক সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় যুগ, যা ১২শ শতাব্দী থেকে ১৮শ শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
- এই সময়ে বাংলা ভাষার সাহিত্যিকেরা ধর্মীয়, সামাজিক, এবং রোমান্টিক বিষয়বস্তু নিয়ে রচনা করেছেন।
- মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে প্রধানত দুইটি ধারা লক্ষ্য করা যায়: ধর্মীয় সাহিত্য ও প্রেমমূলক বা রোমান্স সাহিত্য।

ধর্মীয় সাহিত্য:
- মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের একটি বড় অংশ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, উপদেশ ও কাব্য নিয়ে গঠিত।
- এই সময়ে বেশ কয়েকজন উল্লেখযোগ্য কবি এবং সাহিত্যিক তাঁদের কীর্তন, কাব্য এবং গীতিকাব্যে ধর্মীয় ভাবধারাকে কেন্দ্র করে রচনা করেছেন।

প্রেমমূলক বা রোমান্স সাহিত্য:
- মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে প্রেমমূলক ও রোমান্স কাব্যরীতি বিশেষভাবে প্রভাবিত ছিল।
- এই ধারার কাব্যে সাধারণত রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকাহিনী বা অন্যান্য রোমান্টিক দিক তুলে ধরা হয়েছে।

ফ্রিতে ২ লাখ প্রশ্নের টপিক, সাব-টপিক ভিত্তিক ও ১০০০+ জব শুলুশন্স বিস্তারিতে ব্যাখ্যাসহ পড়তে ও আপনার পড়ার ট্র্যাকিং রাখতে সাইটে লগইন করুন।

লগইন করুন
- বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ১২০১-১৩৫০ সাল পর্যন্ত সময়কে অন্ধকার যুগ বলে।
- ত্রয়োদশ শতকে প্রাকৃত ভাষায় শ্রীহর্ষ রচিত গীতিকবিতার মহাসঙ্কলন 'প্রাকৃতপৈঙ্গল', যা অন্ধকার যুগের প্রথম সাহিত্যিক নিদর্শন।
- অন্ধকার যুগের অপর ২টি সাহিত্য হলো: রামাই পণ্ডিত রচিত ৫১টি অধ্যায় সম্বলিত সংস্কৃত ভাষায় গদ্য পদ্য মিশ্রিত চম্পুকাব্য 'শূন্যপুরাণ' এবং সংস্কৃত ভাষায় রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি হলায়ুধ মিশ্র কর্তৃক রচিত ২৫টি অধ্যায়ে গদ্য পদ্যে মিশ্রিত চম্পুকাব্য 'সেক শুভোদয়া'। 
- নীহাররঞ্জন রায় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে উল্লেখ করেছেন যে, ডাক ও খনার বচন বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম।
- এগুলো মূলত কৃষি, আবহাওয়া, এবং দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতাজাত ছড়া বা বচন। তিনি এগুলোকে প্রাক তুর্কি আমলের রচনা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যা তুর্কি শাসনের আগের সময়ের (৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে) অন্তর্ভুক্ত।
- এই সময়কাল বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ হিসেবে বিবেচিত হয়।
- ডাক ও খনার বচনের লিখিত কোনো প্রমাণ না থাকলেও এগুলো মৌখিক সাহিত্য হিসেবে গ্রামবাংলার মানুষের মধ্যে প্রচলিত ছিল।
- এগুলোতে কৃষি ও আবহাওয়ার জ্ঞান ছন্দাকারে প্রকাশিত হয়েছে, যা প্রাচীন বাংলার সমাজজীবনের প্রতিফলন।
- ডাকের বচনে আসল গুরুত্ব পেয়েছে জ্যোতিষশাস্ত্র।
- ডাকের বচন মূলত প্রাচীন বাংলার লোকজ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার প্রতিফলন।
- এতে জ্যোতিষশাস্ত্র এবং ক্ষেত্রতত্ত্বের বিষয়বস্তু প্রাধান্য পেয়েছে।
- এই বচনগুলোতে তিথি, নক্ষত্র, বার, দিকনির্দেশনা এবং মানব চরিত্রের ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে।
- এটি লোকজ জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে দিকনির্দেশনা প্রদান করত।

- শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মনাম ছিল বিশ্বম্ভর মিশ্র।
- তিনি ১৪৮৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন।
- তাঁর পিতার নাম ছিল জগন্নাথ মিশ্র এবং মাতার নাম শচীদেবী।
- শৈশবে তিনি "নিমাই" নামে পরিচিত ছিলেন, কারণ তিনি নিম গাছের নিচে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
- তাঁর গাত্রবর্ণ উজ্জ্বল হওয়ায় তাঁকে "গৌরাঙ্গ" নামেও ডাকা হতো।
- পরবর্তীতে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করে "শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য" নামে পরিচিত হন।
- আরাকান বা রোসাঙ্গ রাজসভার অন্যতম প্রধান সভাকবি ছিলেন মহাকবি আলাওল।
- তিনি আনুমানিক ১৬০৭ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারি থানার জোবরা গ্রামে মতান্তরে ফরিদপুরের ফতেহাবাদ পরগনায় জন্মগ্রহণ করেন।
- মাগন ঠাকুরের প্রেরণায় তিনি কাব্য রচনায় মনোনিবেশ করেন।
- তার রচিত কাব্যগ্রন্থগুলি হলো- ‘পদ্মাবতী’, ‘সয়ফুলমুলুক-বদিউজ্জামাল’, ‘সিকান্দারনামা’, ‘হপ্তপয়কর’, ‘তোহফা বা তত্ত্বোপদেশ’, ‘রাগতালমালা’ এবং দৌলত কাজীর অসমাপ্ত ‘সতীময়না-লোর-চন্দ্রানী’।
- তার ‘হপ্তপয়কর’ কাব্যটি পারস্য কবি নিজামী গঞ্জভীর কাব্যের ভাবানুবাদ।
বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগের মেয়াদকাল— ১২০১--১৩৫০।
প্রাচীন যুগ --(৬৫০--১২০০),
মধ্যযুগ (১২০১--১৮০০ ),
আধুনিক যুগ ১৮০১ থেকে বর্তমান পর্যন্ত।
কিন্তু এই যুগ বিভাগের মধ্য ১২০১--১৩৫০ পর্যন্ত সময়কে অন্ধকার যুগ বলা হয়।
- বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে বিশেষ এক শ্রেণির ধর্মবিষয়ক আখ্যান কাব্যই মঙ্গলকাব্য।
- এটি রচনার মূল কারণ স্বপ্নদেবী কর্তৃক আদেশ লাভ।

- যে কাব্যে দেবতার আরাধনা বা মাহাত্ম্য-কীর্তন করা হয়; যে কাব্য শ্রবণ করলেও মঙ্গল হয় বা ঘরে রাখলেও মঙ্গল হয় অথবা এক মঙ্গলবার শুরু হতো এবং পরবর্তী মঙ্গলবার শেষ হতো, তাকেই বলা হয় মঙ্গলকাব্য।
- মূলত, লৌকিক দেব-দেবী নিয়ে রচিত কাব্যই মঙ্গলকাব্য।
- 'গৌরীমঙ্গল', 'ভবানীমঙ্গল', 'দুর্গামঙ্গল', 'অন্নদামঙ্গল', 'শিবমঙ্গল', 'মনসামঙ্গল', 'চণ্ডীমঙ্গল', 'সারদামঙ্গল', 'কালিকামঙ্গল', 'বাশুলীমঙ্গল' প্রভৃতি বিখ্যাত মঙ্গলকাব্য।
- বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে শিব উপাসক এক শ্রেণীর যোগী সম্প্রদায়ের নাথ ধর্মের কাহিনী অবলম্বনে রচিত কাব্যকে নাথ সাহিত্য বলা হয়।
- ভবানীদাস রচিত বিখ্যাত নাথ গীতিকা ‘ময়নামতির গান'।
- সুকুর মামুদ নাথ সাহিত্যের কবি।
- নাথ সাহিত্যের আদি ও প্রধান কবি শেখ ফয়জুল্লাহ। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ - গোরক্ষ বিজয়।

কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাথ সাহিত্যঃ
১. গোরাক্ষ বিজয় > শেখ ফয়জুল্লাহ
২. গোপীচন্দ্রের সন্যাস > শুকুর মুহম্মদ
৩. মীনচেতন > শ্যামাদাস সেন
৪. ময়নামতির গান > ভবানী দাস
৫. গোর্খবিজয় > ভীমসেন রায়
- মঙ্গলকাব্যের 'চাঁদ সওদাগর' চরিত্রটি 'দেবতা বিরোধী' বলে পরিচিত।
- 'মনসামঙ্গল' কাব্যে চাঁদ সওদাগর চরিত্রটি দেবী মনসার বিরোধিতা করে।
- দেবী মনসার পূজা না করার জন্য চাঁদ সওদাগরের স্ত্রী লক্ষ্মীন্দ্রাকে অভিশাপ দেয়।
- চাঁদ সওদাগর দেবী মনসার অভিশাপকে অস্বীকার করে এবং তার স্ত্রীর জন্য লড়াই করে।


ফ্রিতে ২ লাখ প্রশ্নের টপিক, সাব-টপিক ভিত্তিক ও ১০০০+ জব শুলুশন্স বিস্তারিতে ব্যাখ্যাসহ পড়তে ও আপনার পড়ার ট্র্যাকিং রাখতে সাইটে লগইন করুন।

লগইন করুন
- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন হল বড়ু চণ্ডীদাস রচিত একটি মধ্যযুগীয় বাংলা কাব্য।
- এটি আদি মধ্যযুগীয় তথা প্রাক্-চৈতন্য যুগে বাংলা ভাষায় লেখা একমাত্র আখ্যানকাব্য।
- ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ বাঁকুড়া জেলার কাঁকিল্যা গ্রামের একটি গোয়ালঘর থেকে এই কাব্যের খণ্ডিত পুথিটি আবিষ্কার করেন।
- ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁরই সম্পাদনায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে পুথিটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মূল উপজীব্য রাধা ও কৃষ্ণের প্রণয়কাহিনি।
- কাব্যের প্রধান তিন চরিত্র রাধা, কৃষ্ণ ও বড়ায়ি।
সঠিক উত্তর: 0 | ভুল উত্তর: 0