ভাষার প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ (295 টি প্রশ্ন )

বাংলা ভাষায় যখন তৎসম (সংস্কৃত থেকে আগত) এবং দেশীয় শব্দের ভুল মিশ্রণ ঘটে, তখন যে ব্যাকরণগত ত্রুটি দেখা যায়, তাকে গুরুচণ্ডালী দোষ বলা হয়। এই দোষের কারণে বাক্যের সৌন্দর্য এবং অর্থগত মান নষ্ট হয়।

উদাহরণস্বরূপ, 'গরুর গাড়ি' একটি শুদ্ধ প্রয়োগ, কারণ এখানে 'গরু' (দেশীয় শব্দ) এবং 'গাড়ি' (দেশীয় শব্দ) একসঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে। একইভাবে, 'শকট' (তৎসম শব্দ) ব্যবহারের ক্ষেত্রে বলা উচিত 'গো-শকট'। কিন্তু যদি বলা হয় 'গরুর শকট', তবে এটি গুরুচণ্ডালী দোষের উদাহরণ। একই ভাবে, 'মড়াদাহ' শব্দটিও ভুল, কারণ 'মড়া' দেশীয় এবং 'দাহ' তৎসম শব্দ। এর শুদ্ধ রূপ হবে 'শবদাহ' (তৎসম) অথবা 'মড়াপোড়া' (দেশীয়)।

গুরুচণ্ডালী দোষের কারণে বাক্য তার স্বাভাবিকতা হারায়। যেমন, 'এ কাজে তাহার হাত পাকা' বাক্যটিতে গুরুচণ্ডালী দোষ রয়েছে। এর শুদ্ধ রূপ হতে পারে 'এই কার্যে তাহার হস্ত পাকা' (তৎসম শব্দের প্রয়োগ) অথবা 'এ কাজে তার হাত পাকা' (দেশীয় শব্দের প্রয়োগ)।


A) আমি অপমান হয়েছি।
শুদ্ধ রূপ: আমি অপমানিত হয়েছি।
কারণ: 'অপমান' বিশেষ্য পদ, কিন্তু এখানে বিশেষণ পদের প্রয়োজন। তাই 'অপমানিত' হবে।

C) তিনি স্বস্ত্রীক বেড়াতে গেছেন।
শুদ্ধ রূপ: তিনি সস্ত্রীক বেড়াতে গেছেন।
কারণ: 'সস্ত্রীক' শব্দের অর্থ 'স্ত্রীসহ'। এখানে 'স্বস্ত্রীক' বানানটি ভুল।

D) দৈন্যতা প্রশংসার যোগ্য নয়।
শুদ্ধ রূপ: দৈন্য প্রশংসার যোগ্য নয়। (অথবা, দীনতা প্রশংসার যোগ্য নয়।)
কারণ: 'দৈন্য' এবং 'দীনতা' উভয় শব্দের অর্থই দারিদ্র্য বা হীনাবস্থা। 'দৈন্য' শব্দের সাথে আবার 'তা' প্রত্যয় যোগ করলে বাহুল্য দোষ ঘটে।
'আরোগ্য' একটি বিশেষ্য পদ, যার অর্থ রোগমুক্তি বা স্বাস্থ্য। বাক্যটিতে ক্রিয়াপদের সাথে ব্যবহারের জন্য একটি বিশেষণ পদের প্রয়োজন।

শুদ্ধ বাক্যটি হবে:
তিনি আরোগ্য লাভ করেছেন। (এখানে 'আরোগ্য' বিশেষ্য হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে কিন্তু ক্রিয়াপদ 'লাভ করেছেন' যুক্ত হওয়ায় বাক্যটি শুদ্ধ হয়েছে।)
অথবা, তিনি সুস্থ হয়েছেন। (এখানে 'সুস্থ' বিশেষণ পদ।)
'গম্ভীর' একটি বিশেষণ পদ। এর থেকে বিশেষ্য পদ গঠন করার জন্য দুটি প্রত্যয় ব্যবহার করা যায়: '-য' অথবা '-তা'।

গম্ভীর + য = গাম্ভীর্য (শুদ্ধ)
গম্ভীর + তা = গম্ভীরতা (শুদ্ধ)

'গাম্ভীর্যতা' শব্দটিতে 'গাম্ভীর্য' (যা ইতোমধ্যে একটি বিশেষ্য) শব্দের সাথে আবার '-তা' প্রত্যয় যোগ করা হয়েছে। একই অর্থে দুটি প্রত্যয় ব্যবহার করা বাহুল্য এবং ভুল।
অশুদ্ধ বাক্য: নিরোগ লোক আসলে সুখী।
- বাক্যটি বানানঘটিত অশুদ্ধ।
- 'নিরোগ' শব্দের শুদ্ধ বানানা - নীরোগ।
শুদ্ধ বাক্য: নীরোগ লোক আসলে সুখী।
- তৎসম শব্দের সঙ্গে দেশীয় শব্দের প্রয়োগ কখনো কখনো গুরুচণ্ডালী দোষ সৃষ্টি করে। এ দোষে দুষ্ট শব্দ তার যোগ্যতা হারায় ।
- যেমন গরুর গাড়ি, শব্দাহ, মড়াপোড়া প্রকৃতির স্থলে যথাক্রমে গরুর শকট, মড়াদাহ প্রভৃতি প্রয়োগ গুরুচন্ডালী দোষ সৃষ্টি করে। গুরুচণ্ডালী দোষ মুক্ত শব্দ শবদাহ।
• অলংকার আবেগ:
- অলংকার আবেগে এ ধরনের শব্দ বাক্যের অর্থের পরিবর্তন না ঘটিয়ে কোমলতা, মাধুর্যতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে।
- এবং সংশয়, অনুরোধ, মিনতি ইত্যাদি মনোভাব প্রকাশের জন্য অলংকার আবেগ ব্যবহৃত হয়।
যেমন:
- যাকগে, ওসব কথা থাক।
- দুর ! এ কথা কি বলতে আছে?
বাকী বাক্যগুলোর শুদ্ধরূপ ঃ
অশুদ্ধ বাক্য:  আমি কারও সাতেও নেই, সতেরােতেও নেই।
শুদ্ধ বাক্য: আমি কারও সাতেও নেই, পাঁচেও নেই।

অশুদ্ধ বাক্য: আপনি স্বপরিবারে আমন্ত্রিত।
শুদ্ধ বাক্য: আপনি সপরিবারে আমন্ত্রিত।

অশুদ্ধ বাক্য: সারা জীবন ভূতের মজুরি খেটে মরলাম ।
শুদ্ধ বাক্য: সারা জীবন ভূতের বেগার খেটে মরলাম ।

ফ্রিতে ২ লাখ প্রশ্নের টপিক, সাব-টপিক ভিত্তিক ও ১০০০+ জব শুলুশন্স বিস্তারিতে ব্যাখ্যাসহ পড়তে ও আপনার পড়ার ট্র্যাকিং রাখতে সাইটে লগইন করুন।

লগইন করুন
- 'দরিদ্র' একটি বিশেষণ পদ।
- 'দরিদ্র' শব্দের সঙ্গে /-য/প্রত্যয় যোগ করলে গঠিত হয় (দরিদ্র + য) দারিদ্র্য।
- 'দারিদ্র্য' একটি বিশেষ্য পদ। এবার 'দারিদ্র্য'র সাথে যদি /-তা/ যোগ করা হয়, তাহলে গঠিত হয় (দারিদ্র্য+তা) দারিদ্র্যতা।
- 'দারিদ্র্যতা' গঠনে একই সঙ্গে /-য/ এবং /-তা/প্রত্যয় যুক্ত হওয়ার কারণে এটি অশুদ্ধ শব্দ।
মৌনতা শব্দটিতে "তা" প্রত্যয়ের অপপ্রয়োগ ঘটেছে।
শুদ্ধ প্রয়োগ: মৌন।

এরূপ কিছু অশুদ্ধ শব্দের শুদ্ধরূপ হলো:
• অধৈর্যতা - অধৈর্য, ধীরতা।
• আলস্যতা - আলস্য, অলসতা।
• ঐক্যতা - ঐক্য, একতা।
• দৈন্যতা - দৈন্য, দীনতা।
• মৈত্রতা- মৈত্র/মিত্রতা।
• বৈশিষ্টতা- বৈশিষ্ট্য/বিশিষ্টিতা।
• কার্পণ্যতা - কার্পন্য, কৃপণতা।
মৌনতাশব্দটিতে "তা" প্রত্যয়ের অপপ্রয়োগ ঘটেছে।
শুদ্ধ প্রয়োগ: মৌন।

এরূপ কিছু অশুদ্ধ শব্দের শুদ্ধরূপ হলো:
• অধৈর্যতা - অধৈর্য, ধীরতা।
• আলস্যতা - আলস্য, অলসতা।
• ঐক্যতা - ঐক্য, একতা।
• দৈন্যতা - দৈন্য, দীনতা।
• মৈত্রতা- মৈত্র/মিত্রতা।
• বৈশিষ্টতা- বৈশিষ্ট্য/বিশিষ্টিতা।
• কার্পণ্যতা - কার্পন্য, কৃপণতা।
- শব্দের শেষে খণ্ড ত (ৎ) প্রয়োগ হয় না।

- সঠিক বানান: উচিত
- একটি মাত্র নয়, একটিমাত্র
- একভূত নয়, একীভূত
- এক্ষুণি নয়, এক্ষুনি
- এতদ্বারা নয়, এতদ্দ্বারা (দ্দ+ব)
- এতৎউদ্দেশ্যে নয়, এতদুদ্দেশ্যে (তেমনি এতদুপলক্ষ্যে)
- এতদ্‌সত্ত্বেও নয়, এতৎসত্ত্বেও
- ঐকবদ্ধ নয়, ঐক্যবদ্ধ
- ঐকাগ্র নয়, ঐকাগ্র্য
- ঐক্যতান নয়, ঐকতান
- ঐক্যমত নয়, ঐকমত্য
- ঐক্যতা নয়, ঐক্য/একতা

- সূত্র: সর্বশেষ সংশোধিত বাংলা শব্দের তালিকা, ড. মোহাম্মদ আমীন
- প্রয়োজনের অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার করলে বাহুল্য দোষ ঘটে এবং এর ফলে বাক্য তার যোগ্যতা গুণ হারিয়ে থাকে।যেমন- সকল মাছগুলোর দাম কত?।
- বাংলা ভাষায় একই বাক্যে দুইবার বহুবচন ব্যবহৃত হয় না।
- দুইবার বহুবচন বাচক চিহ্ন বা শব্দ ব্যবহার করলে শব্দ বাহুল্য দোষে দুষ্ট হয়।
• 'অধীন' শব্দের প্রয়োগ শুদ্ধ।

অশুদ্ধ ও শুদ্ধ প্রয়োগ: 
• ‘জন্মবার্ষিক’ - ‘জন্মবার্ষিকী’।
• 'ঐক্যতা' - ঐক্য বা একতা।
• মহাত্ম' - মহত্ত্ব।
- অধীনী শব্দটি 'অধীন' শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ। কিন্তু 'অধীন' শব্দটি লিঙ্গ নিরপেক্ষ এবং পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই এর স্ত্রীলিঙ্গ রূপ তৈরি করা অপ্রয়োজনীয় এবং ভুল।
- 'অধীনী' ছাড়া অন্য শব্দগুলি বাংলা ভাষায় স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য লিঙ্গভেদ নির্দেশক শব্দ।
- 'অভাগা' পুংলিঙ্গ এবং 'অভাগী' স্ত্রীলিঙ্গ - দুটিই বাংলা ভাষায় স্বীকৃত।
- 'অনাথ' পুংলিঙ্গ এবং 'অনাথা' স্ত্রীলিঙ্গ - উভয়ই গ্রহণযোগ্য।
- গোপী শব্দটি 'গোপ' শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ।
- "শ্রেষ্ঠত্ব" শব্দের সাথে অতিরিক্ত "তা" প্রত্যয় যোগ করা হয়েছে।
- "শ্রেষ্ঠত্ব" নিজেই একটি সম্পূর্ণ শব্দ, যা শ্রেষ্ঠ হওয়ার গুণ বা অবস্থা বোঝায়। এখানে "তা" যোগ করা অনাবশ্যক ও ভুল।
শুদ্ধ বাক্য- আমি তোমার অপরাধ সম্পর্কে নিঃসন্দেহ।
এখানে, নিঃসন্দেহ শব্দটির ভুল প্রয়োগ হয়েছে।


ফ্রিতে ২ লাখ প্রশ্নের টপিক, সাব-টপিক ভিত্তিক ও ১০০০+ জব শুলুশন্স বিস্তারিতে ব্যাখ্যাসহ পড়তে ও আপনার পড়ার ট্র্যাকিং রাখতে সাইটে লগইন করুন।

লগইন করুন
- এই বাক্যে 'ঘাটের মড়া' (অর্থ- মৃত্যু আসন্ন যার/অকর্মণ্য বৃদ্ধ) এর পরিবর্তে 'পুকুরের মড়া' ব্যবহার করাতে বাগধারাটি তার যোগ্যতা হারিয়েছে।

সঠিক বাক্যটি হবে - 'ওই ঘাটের মড়ার সাথে শেষ পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে ঠিক করলে!'
সাধারণ প্রত্যয়জনিত কিছু শব্দের শুদ্ধ প্রয়োগঃ অধীন, আবশ্যক, অর্থনীতিক, দূষণীয়, পূজ্য, স্বত্ব, জ্ঞানবান, ব্যাকুল ইত্যাদি।

এখানে 'বিধি' শব্দটি নিয়ম অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ধর্মীয় বিধিবিধান বলতে ধর্মের অনুশাসন, নিয়মকানুন বা রীতিনীতি বোঝায় যা অনুসারীদের মেনে চলতে হয়।
এই বাক্যে বাক্যে 'হাত' ব্যবহৃত হয়েছে - নিপুণতা বা সুখ্যাতি অর্থে। 
শব্দের প্রয়োগভেদে অর্থ বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন:
- হাত আসা ( দক্ষতা),
- হাত গুটানো ( কার্যে বিরতি),
- হাত ধরা ( আয়ত্তে আসা),
- হাত ছাড়া ( হস্তচু্ত),
- হাত থাকা ( প্রভাব),
- হাতের পাঁচ ( শেষ সম্বল) ইত্যাদি।
তার লেখার হাত আছে - মানে তার লেখার দক্ষতা আছে। অর্থাৎ তার লেখা ভালো।
শব্দের প্রয়োগভেদে অর্থ বিভিন্ন ধরনের হয় । যেমন - হাত আসা ( দক্ষতা ) , হাত গুটানো (কাজ থেকে বিরতি ) ,হাত থাকা ( প্রভাব ) ইত্যাদি । তার লেখার হাত আছে মানে তার লেখার দক্ষতা আছে ।অর্থাৎ তার হাত ভালো ।

'মুখ তোলা' অর্থ অনুগ্রহ লাভ করা, প্রসন্ন হওয়া।
উদাহরণ - তুম আমার সাথে থাকলে অবশ্যই ব্যবসায় লাভ হবে।

মুখ রাখা - সম্মান রক্ষা করা
উদাহরণ - টাকাটা ধার দিয়ে তুমি আমার মুখ রেখেছ








ফ্রিতে ২ লাখ প্রশ্নের টপিক, সাব-টপিক ভিত্তিক ও ১০০০+ জব শুলুশন্স বিস্তারিতে ব্যাখ্যাসহ পড়তে ও আপনার পড়ার ট্র্যাকিং রাখতে সাইটে লগইন করুন।

লগইন করুন

সঠিক উত্তর: 0 | ভুল উত্তর: 0